1568447539.jpg

দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগ নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের যুগান্তকারী চেতনা জাতি হিসেবে আমাদের বেশ আশাবাদী করেছিল। ১৯৭২ সালের পর বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে নিবার্হী বিভাগ হতে পৃথকীকরণের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইং ১৫/০১/১৯৭২ খ্রিঃ তারিখে দৈনিক বাংলা পত্রিকার ০৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক বক্তৃতায় তিনি ঘোষণা করেন, “আমি হাইকোর্ট ও অধস্তন আদালতগুলো যাতে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমি এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত করতে চাই যে দুর্নীতি ও কালক্ষেপণ উচ্ছেদ করার প্রেক্ষিতে বিচার ব্যবস্থার কতকগুলো মৌলিক ত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রশাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের নীতি সুক্ষভাবে পর্যালোচনা করা হবে।”

১৫ই আগষ্ট, ১৯৭৫ থেকে ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে বিভিন্ন সরকার বৈচিত্রময় ছাঁচে সাজাতে সাজাতে ১লা নভেম্বর ২০০৭ বিচার বিভাগকে প্রকৃতপক্ষে নিবার্হী বিভাগ হতে পৃথক করা হয়। দেশের বিচারাঙ্গনের মানুষজনসহ আইনের জগতের সবাই তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারকে ঐ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্য সাধুবাদ জানায়। বিচার বিভাগ স্বাধীনকরণের উদ্দেশ্যে ২০০৭-২০০৮ সময়ে বেশ কিছু আইন সংশোধন ও নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। যেমন- বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা, ২০০৭; বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পে স্কেল, ২০১৬ ইত্যাদি। এছাড়াও অধস্তন আদালতসমূহের শৃংখলা বিধানসহ একটি আলাদা ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। সবথেকে যুগান্তকারী সংশোধনী আনা হয় ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এ। এই আইনের ০৬ ধারায় দুই প্রকারের ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টি করা হয়। এক পক্ষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যপক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭-১৪৮ ধারা, ১৭৬ ধারাসহ আরও কিছু ধারা যেমন ২৯(বি) ধারা, ৩২ ধারায় কার্যক্রম পরিচালনা ও দণ্ড প্রদানের ক্ষমতাসহ মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ, ২০০৯ এর অধীনে বাংলাদেশে প্রচলিত ৪৯ টি আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।

বর্তমানে মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে সিদ্ধান্ত ঝুলন্ত অবস্থায় থাকায় সে বিষয়ের আলোকপাত করা সমীচিন হবে না। বরং বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাধীন বিচার বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার দাবী রাখে। মোদ্দাকথা হলো বাংলাদেশের বিচার বিভাগ আদৌ স্বাধীন হয়েছে কিনা ? নির্বাহী বিভাগের থেকে বাংলাদেশের ফৌজদারী বিচার বিভাগ পৃথককরণ বহুলাংশে করা হয়েছে। ফলে ২০০৭ সালের পর নির্বাহী বিভাগের তথা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ফৌজদারী কার্যবিধির গর্ভে অনুপ্রবেশ করে সব রকমের ফৌজদারী অপরাধের বিচার করার দৌরাত্ম কিছুটা হলেও কমেছে।

নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিকে শক্তিশালী ও জাঁকজমকপূর্ণ অবয়ব ও অবকাঠামো প্রদানের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এভাবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি সময়ের প্রয়োজনের তাগিদে অনেক বেশি গতিশীল হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য মোট বাজেটে ১৮৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।। এর মধ্যে সারাদেশের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য বাজেট ২৭৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, সারাদেশের দেওয়ানি ও দায়রা আদালতের জন্য বাজেট ৪৫৫ কোটি ৯২ লাখ ৬০ কোটি টাকা।

এছাড়া দেশের ৬৪টি জেলাতেই চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটদের বহুতল ভবন নিমার্নের কাজ অতি দ্রততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির সব বিচারক অফিসে স্টেনো পেয়েছেন। তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত ১লা জানুয়ারী ২০১৯ হতে ৩১ মার্চ, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মামলার পরিসংখ্যানমূলক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে সারা দেশের আদালত গুলোতে বিচারধীন মামলার সংখ্যা ৩৫,৮২,৩৪৭। ২০০৮ থেকে ২০১৯ সালের ৩১ শে মার্চ পযর্ন্ত নতুন মামলা দায়ের ও পুনজীবিত মামলার মোট সংখ্যা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫২ হাজার ৬৬১ টি। এই সময়ে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিষ্পওি করেছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৫০ টি মামলা। প্রতি বছরে গড়ে ১২ লাখের বেশি মামলা নিষ্পওি করা হচ্ছে। যেহেতু ফৌজদারী আদালত ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সুযোগ সুবিধা বেশি তাই তাদের নিষ্পত্তির হার বেশি হবে তাই স্বাভাবিক। এভাবে বাংলাদেশ সরকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিকে বেগবান করে তুলেছেন।

বাংলাদেশ সরকার কি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির অগ্রগতির সাথে সাথে দেওয়ানী বিচার বিভাগের উন্নতি করেছেন? সোজা উওর- খুব কম। বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতসমূহের বর্তমান অবকাঠামোগত ও গুণগত মান ক্রমাবনতর দিকেই ধাবমান। খুব ছোট একটা বিষয়ের অবতারণা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সমগ্র বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতে সহকারী জজদের স্টেনো না থাকার আক্ষেপ সবার কাছে খুব নতুন মনে হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান আমল হতেই সহকারী জজগণ স্টেনো দাবী করে আসছেন কিন্তু কোন সরকারই তা দেয় নি। তাই সাবেক জেলা জজ গাজী শামছুর রহমান তার ‘বিচারক জীবনের স্মৃতিচারণ’ (২০১০) নামক বইয়ের ১৯১-১৯২ পাতায় উল্লেখ করেছেন, ১৯৬০এর দশকে পাকিস্তান সিভিল সাভির্সের (বিচারিক) এক সম্মেলনে প্রথম মুন্সেফদের জন্য স্টেনোগ্রাফার দাবী করেন। পরবর্তীতে মুন্সেফদের নাম পরিবর্তন হয়ে সহকারী জজ হয়েছে। কিন্তু স্টেনো আর দেয়া হয়নি । সেই সাথে দেওয়ানী কার্যবিধি ও সিভিল রুলস এন্ড অর্ডার বৃটিশরা যেভাবে রেখে গেছে প্রায় সেভাবেই আছে। দেওয়ানী কার্যবিধিতে কিছু বিধান পরিবর্তন ও সংশোধন করা হলেও জবানবন্দী ও জেরা নেয়ার যে পুরাতন প্রথা তা আধুনিকায়নে সাক্ষ্য আইনের কোন পরিবর্তন বা সংশোধন আনা হয় নি। ফলে একজন বিচারককে বাদী-বিবাদীর আরজি, জবাব অনুসারে জবানবন্দী ও রায় লেখার আগে একই বিষয় মোট ০৬ বার লিখতে হয়। একবার জবানবন্দী হিসেবে, একবার জেরা হিসেবে এবং ডিনাইয়াল হিসেবে দু’পক্ষের কথা ৬ বার লিখতে হয়। ফলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মধ্যেই এক নড়বড়ে ও প্রায় পরাধীন শ্রেণীর দেওয়ানী বিচার বিভাগ কোন রকমে খুঁড়িয়ে চলছে।

এবার আসা যাক দেওয়ানী বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপও দৌরাত্মের বিষয়ে। বাংলাদেশের দেওয়ানী বিচার আদালত সমূহে বিচারাধীন মোকদ্দমা সমূহের প্রায় ৯৮ শতাংশই জমি জায়গার বিরোধ সংক্রান্ত। আর জমি জায়গা নিয়ে বিরোধের উৎপত্তি হয় নিবার্হী বিভাগে কর্মরত কর্মচারীদের ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত ক্রটি বিচ্যুতির কারণে। জেলা প্রশাসক আইনত জেলা কালেক্টরেট। কালেক্টরেট হিসেবে তিনি জেলার ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভূমি মন্ত্রণালয় আলাদা হলেও তা চলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা নির্বাহী কর্মকতা যেমন জেলা কালেক্টরেট, অতিরিক্ত জেলা কালেক্টরেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণ দ্বারা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) একজন বি.সি.এস (প্রশাসন) ক্যাডার। এই ক্যাডার হওয়ার জন্য আইন শাস্ত্রে পড়ালেখা থাক বা না থাক এমন যে কোন যোগ্য নাগরিক বি.সি.এস (প্রশাসন) ক্যাডার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কয়েক বছর পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে উপজেলার ভূমি প্রশাসন ও ভূমি ব্যবস্থাপনার সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। জমির রেকর্ড প্রস্তুত, নামজারী, রেকর্ড, সংশোধন থেকে শুরু করে আপীল শুনানীসহ সব বিষয় তারা করে থাকেন শুধুমাত্র ভূমি বিষয়ক কতিপয় আইনের টেক্সটবুক পড়ে । অথচ তারা যে আদেশ দেন তা খুবই স্পর্শকাতর। তাদের সিদ্ধান্তে কোন নাগরিক যখন তখন তার স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তি হতে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছেন। এক কথায় সি.এস, এস.এ বা আর.এস পর্চার ক্রটি বিচ্যুতি হতেই মূলত দেওয়ানী আদালত সমূহে অসংখ্য মোকদ্দমা হয় যাতে নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ আছে।

আবার উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন কর্মকতা হওয়ার জন্যও আইন শাস্ত্র জানার বাধ্যবাধকতা নেই। বি.সি.এস নন ক্যাডার কর্মকতা হিসেবে এই কর্মকতারা যোগদান করেই নামমাত্র ভূমি আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়ে বিভিন্ন প্রকারের দলিল নিবন্ধন করতে শুরু করেন। তারা শুধুমাত্র নিবন্ধন আইন ও নিবন্ধন বিধিমালা পাঠ করে জমি নিবন্ধনের মত জটিল বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেন কিন্তু আইন সম্পর্কে খুব কমই ওয়াকিবহাল। সেইসাথে উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসেও যারা কর্মরত তারাও ভূমি আইন সম্পকিত জ্ঞানার্জন ছাড়াই সেটেলমেন্টের কাজ করে যাচ্ছেন। তারা সরাসরি ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে কর্মরত।

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, উপরের তিন বিভাগের তিন ধরণের কর্মকতাগণ দেওয়ানী মোকদ্দমা সৃষ্টির পেছনে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। স্বাভাবিক ভাবেই আঁচ করা যায় তাদের কর্মকান্ড দেওয়ানী বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করতে না পারলেও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এরইমধ্যে অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনে ২২/০৮/১৯ সালে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে সাবরেজিস্ট্রার অফিসকে আইন মন্ত্রনালয় হতে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীন আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

সব থেকে ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নেয়া ‘সরকারী ও স্থানীয়কর্তৃপক্ষের ভূমি ও স্থাপনা (দখল পুনরুদ্ধার) আইন, ২০১৯’ এর খসড়ায়। সেখানে মোবাইল কোর্টকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মামলা পরিচালনা ও নিষ্পত্তি করার জন্য যেখানে অবৈধভাবে সরকারী ভূমি দখলের অপরাধে কোন ব্যক্তিকে সর্ব্বোচ্চ ০২ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। সেখানে দেওয়ানী আদালতের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বলা হয়েছে,“কোনও দেওয়ানী আদালত এই আইনের আওতায় জেলা প্রশাসককে ভূমি বা স্থাপনা দখল নিতে বাধা দিতে এবং অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে না।” এই সিদ্ধান্ত কতখানি সাংবিধানিকভাবে বৈধ তা আলোচনার দাবী রাখে। এই স্বল্প পরিসরে সে আলোচনা সম্ভব নয়। সুতরাং এটা পরিষ্কার করে বলা যায় যে, বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের যে পরোক্ষ দৌরাত্ম ছিল তা এবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। ফলে বিচার বিভাগের এই দুর্বল অংশ আবার ২০০৭ -পূর্ব যুগে প্রবেশ করবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা থাকবে। ফৌজদারী কার্যবিধিতে ১৪৫ ধারায় সম্পত্তির দখল নিয়ে বিরোধের কারণে শান্তিভঙ্গ হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচার করার স্বল্প ক্ষমতাবান। কিন্তু তারপরেও যেভাবে তারা প্রভাব বিস্তার করেন সেই প্রেক্ষাপটে উপরের আইন কার্যকর হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের মাধ্যমে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতির প্রতিফলন কীভাবে ঘটবে তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশরয়েছে।

সামগ্রিক আলোচনা হতে বলা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবলিত বিধান যেমন ১১৫, ১১৬ অনুচ্ছেদ যেভাবে সুপ্রিম কোর্টকে শক্তিশালী করে বিচার বিভাগের পূণার্ঙ্গ স্বাধীনতা দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আইনি চেতনাকে উন্মোচিত করে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিল বর্তমানের ১১৫, ১১৬ ও ১১৬ (ক) অনচ্ছেদ সেই চেতনায় সামগ্রিকভাবে নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু আশা হারানো উচিৎ হবে না। বর্তমানে বিচার বিভাগের যতটুকু ভাল অবস্থান তার বেশিরভাগ বর্তমান সরকারের অবদান। সুতরাং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে সরকার আরও বিজ্ঞোচিত ও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের নীতি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবেন বলে আশা করা যায়।

লেখক: সহকারী জজ, ঝিনাইদহ।